কোকাটেল পাখি পালন পদ্ধতি
সারা বিশ্বের মত বাংলাদেশেও বাজরিগারের পর সবচেয়ে জনপ্রিয় পোষা পাখি হলো কোকাটেলপাখি। কোকাটেলের জনপ্রিয়তার অন্যতম কারন হলো এটি খুব ভালো শিষ দিতে পারে। এটি পালা খুব কঠিন কিছু না। আবার টিয়া পাখির মত বড় খাচাও লাগে না। খুব বেশি চিৎকার ও করে না। আর দেখতে অবশ্যই কিউট। সহজে পোষ মানে।
আজ আমরা কোকাটেলপাখি পালন করা নিয়ে জানব। কোকাটেলের দাম কত, খাবার কি, খাচার মাপ কত, কি কি রোগ বালাই হয় ইত্যাদি।
আরও পড়ুন-টিয়া পাখি পালন পদ্ধতি
![লুটিনো কোকাটেল](https://www.aviancommunity.com/wp-content/uploads/2024/03/lutino-cockatiel-2-880x1024.jpg)
কোকাটেলের মিউটেশন
পৃথিবীতে ১৪ ধরনের কোকাটেলের মিউটেশন পাওয়া যায়। বাংলাদেশে সব না পাওয়া গেলেও মোটামুটি ৮-১০ ধরনের মিউটেশন পাওয়া যায়। সব চেয়ে জনপ্রিয় মিউটেশন হলো লুটিনো। আপনি যদি জাস্ট পোষ মানানোর জন্য কোকাটেলপুষতে চান তাহলে আমি পরামর্শ দেব গ্রে মিউটেশন পালার জন্য। গ্রে মিউটেশনের পাখি গুলো অসুস্থ কম হয়। আর ভালো শীষ দিতে পারে।
অ্যালবিনো মিউটেশনের পাখি গুলো পুরোটাই সাদা কালারের হয়। দেখতে সুন্দর। সবচেয়ে সুন্দর হলো ভি-পাইড গুলো। সারা শরীর সাদা বা হলুদ, পিঠে ভি আকৃতির গ্রে কালার। এগুলো সবচেয়ে দামী মিউটেশন।
কোকাটেলপাখির দাম
গ্রে মিউটেশনের বেবি পাখি গুলো ৩-৪ হাজারের মধ্যে পাবেন। লুটিনো মিউটেশনের বেবি ৪-৫ হাজার, অ্যালবিনো মিউটেশনের বেবি ৬-৮ হাজার। ভি পাইড বেবি ১০-১২ হাজার পড়বে।
অ্যাডাল্ট পাখির দাম বেশি। গ্রে মিউটেশন জোড়া পাখি ৬-৭ হাজার, লুটিনো ৮-৯ হাজার, অ্যালবিনো ১০-১২ হাজার, ভি পাইড গুলো কালার কোয়ালিটির উপর নির্ভর করে ২০-২৫ হাজার টাকা।
পাখি ব্রিডের উদ্দেশ্যেই নিন আর পোষার উদ্দেশ্যেই নিন, সব সময় চেষ্টা করবেন বেবি পাখি নিতে। বেবি পাখি আপনার বাসার পরিবেশের সাথে দ্রুত মানিয়ে নিতে পারবে। যেটা অ্যাডাল্ট পাখি পারে না।
![কোকাটেল পাখি পালন পদ্ধতি](https://www.aviancommunity.com/wp-content/uploads/2024/03/grey-coc-519x1024.jpg)
কোকাটেলপাখির খাবার
আমাদের দেশে কোকাটেলমূলত সীড মিক্স দিয়েই পোষা হয়। সপ্তাহে দুই দিন শাক-সবজি বা ফল দেয়া যায়। কোকাটেলের সীড মিক্স আপনি নিজেই বানিয়ে নিতে পারবেন। এর কোন নির্দিষ্ট নিয়ম নেই। তবে চেষ্টা করবেন সীড মিক্সে ক্যানারি সীড বেশি রাখাতে। যদিও ক্যানারি সীডের দাম বেশি কিন্তু এটি আপনার পাখিকে হেলদি রাখবে। পাঁচ কেজি সীড মিক্স এর জন্য-
- ২ কেজি চিনা
- ১ কেজি বিভিন্ন মিলেট
- ১ কেজি ক্যানারি সীড
- ৫০০ গ্রাম পোলাও চালের ধান
- ২৫০ গ্রাম সূর্যমুখি বীজ
- ২৫০ গ্রাম কুমড়ার বীজ, কুসুম ফুলের বীজ, ফ্লাক্স সীড
সূর্যমুখির বীজের পরিমাণ শীতকালে বাড়াতে পারেন। তবে এটি ৫০০ গ্রামের বেশি হওয়া উচিত না। সব সময় পরিষ্কার খাবার দিবেন। অবশ্যই পরিষ্কার পানি খেতে দিবেন। আপনি যে পানি খান সেই পানিই পাখিকে খেতে দিবেন।
![কোকাটেল পাখি পালন পদ্ধতি](https://www.aviancommunity.com/wp-content/uploads/2024/03/millet.jpg)
সপ্তাহে দুই দিন সবুজ শাক, গাজর, কাঁচা মরিচ, পেয়ারা, আপেল, গম সারা রাত ভিজিয়ে রেখে খেতে দিন। ভেজা ছোলাও দিতে পারেন। এই খাবার গুলোকে সফটফুড বলে। সফটফুড পাখির স্বাস্থ্য ভালো রাখে।
খাচায় ভিটামিন ও মিনারেল ব্লক রাখবেন। ক্যাটেল ফিশ বোন ঝুলিয়ে রাখবেন। তাহলে পাখির ক্যালসিয়ামের অভাব হবে না।
কোকাটেলের খাচার মাপ
একটি পাখির জন্য আদর্শ খাচার মাপ হলো ২৪ বাই ২৪ ইঞ্চি। যদি একজোড়া পাখি রাখেন তাহলে ২৪ বাই ২৪ বাই ৩৬ ইঞ্চি খাচা আদর্শ। এর চেয়ে ছোট খাচাতেও পালা যায়। কিন্তু পাখির স্বাস্থ্য ভালো থাকে না।
কোকাটেলের রোগ
কোকাটেলের প্রধান রোগ হলো ঠান্ডা লাগা। কাজেই এমন স্থানে খাচা রাখবেন যাতে সরাসরি বাতাস না লাগে। আরেকটি রোগ হলো চুনা পায়খানা বা পাতলা পায়খানা। মূলত খাবারের মান ভালো না হলে, সীড মিক্সে ফাঙাস পরলে এই সমস্যা দেখা দেয়। পাতলা পায়খানা হলে সফট ফুড আপাতত বন্ধ রাখতে হবে। কোকাটিয়েলে ক্যাংকার রোগ হয়। এই রোগে এডাল্ট পাখির কিছু না হলেও বেবি পাখি গুলো মারা যায়। কোকাটেলের হাড়ে আয়রন জমে থাকে। কাজেই আয়রন বেশি আছে এমন খাবার কোকাটেলকে না দেয়াই উত্তম।
![লুটিনো কোকাটেল](https://www.aviancommunity.com/wp-content/uploads/2024/03/lutino-cockatiel.jpg)
কোকাটেল পাখি পালনে সাবধানতা
কোকাটেল পাখির শরীর থেকে প্রচুর ধুলা বা ডাস্ট উৎপন্ন হয়। কাজেই আপনার যদি ডাস্ট এলার্জি বা শ্বাসকষ্ট রোগ থাকে তাহলে কোকাটে পালা উচিত হবে না। কোকাটেল পাখি ভালোই চিল্লায়। আপনার ফ্যামিলির সবাই এই চিল্লানো সহ্য করবে কি না সেটা আগেই বুঝে নিন। নয়তো দেখা যায় পাখি কিনে আনার পরে দ্রুত আবার সেল করে দিতে হয়। নয়তো কাউকে ফ্রি দিয়ে দিতে হয়।
কোকাটেল কি কথা বলতে পারে
না কোকাটেল কথা বলতে পারে না। তবে সুন্দর শিস দেয়। মোটামুটি সব ধরনের গানই শিস দিয়ে শোনাবে আপনাকে।
উপসংহার
আপনি যদি কোকাটেল পুষতে চান তাহলে আগেই এর সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে শুনে বুঝে তারপর পাখি কিনুন। ঝোকের বশে পাখি কিনে ফেলবেন না। আবার দোকান থেকে পাখি কিনবেন না। দোকানদাররা দাম বেশি রাখে, অনেক সময় অসুস্থ পাখি আপনার কাছে সেল করবে। খাচা ছোট দেবে, শুধুমাত্র চিনা আর ধান খাওয়াতে বলবে। পাখিকে বড় খাচায় রাখুন, পরিষ্কার পানি ও সীড মিক্স খেতে দিন। তাহলে আপনার পাখি অসুস্থ কম হবে। আপনার জীবন কে আনন্দময় করে তুলবে।